85 Namaj Shikkha
নামায, নামাজ (ফার্সি ভাষায়: نَماز) বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্ বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
নামায শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত (ফার্সি ভাষায়: نماز) এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের (আরবি ভাষায়: صلاة, কুরআনিক আরবি: صلوة,) প্রতিশব্দ। বাংলা ভাষায় ‘সালাত’-এর পরিবর্তে সচরাচর ‘নামাজ’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, তুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামায (ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত) বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম সালাত (একবচন) বা সালাহ্ (বহুবচন)।
“সালাত” -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।
ইতিহাস
ইসলামের বিভিন্ন বর্ননা অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সা.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন-এর ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময় জোহর, আসর ও এশা ২ রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকায়াত বিশিষ্ট জোহর, আসর ও এশাকে ৪ রাকায়াতে উন্নীত করার আদেশ দেয়া হয়।
শর্ত
কারো ওপর নামাজ ফরয হওয়ার জন্য শর্তগুলো হলোঃ-
- মুসলমান হওয়া
- সাবালক হওয়া এবং
- সুস্থ মস্তিস্কের হওয়া।
নামাযের শর্তাবলী
নিম্নের পাঁচটি কারণ সংঘটিত হলে নামাজ বৈধ হয়।
- নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হলে। অনিশ্চিত হলে নামাজ হবে না, যদি তা ঠিক ওয়াক্তেও হয়।
- কাবামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তবে অসুস্থ এবং অপারগ ব্যাক্তির জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য।
- সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হল নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ (টাখনুর উপরে) পর্যন্ত, আর নারীর সতর হল মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি ও দুই পায়ের পাতা ব্যতীত সারা শরীর।
- পরিধেয় কাপড়, শরীর ও নামাজের স্থান পরিষ্কার বা পাক-পবিত্র হতে হবে।
- অযু, গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা আর্জন করতে হবে।
নামাযের ফরজ
নামাযের ফরজ মোট ১৩ টি। আহকাম ৬ টি। আরকান ৭ টি। নামাযের বাহিরের কাজগুলিকে আহকাম বলে। আর নামাযের ভিতরের কাজগুলোকে আরকান বলে।
আহকাম
১. শরীর পাক ২. কাপড় বা বস্ত্র পাক ৩. বিছানা(যেখানে নামায পড়া হবে) পাক ৪. ছতর ঢাকা ৫. ক্বেবলামুখী হওয়া ৬. নামাজের নিয়ত করা।
আরকান
১. তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করা ২. দাঁড়িয়ে নামায পড়া ৩. আলহামদু সূরার(সূরা ফাতিহা) সাথে কোরআন থেকে অন্য একটি সূরা পড়া ৪. রুকু করা ৫. সিজদা করা ৬. শেষ বৈঠক করা ৭. নামাযের শেষে কোন কাজ বা কথা বলে (নামায হতে) বের হওয়া
নামাজের নিয়ম
নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয় তবে অসুস্থ হলে সে ক্ষেত্র বসে, শুয়ে, এমন কি এশারার মাধ্যমে নামাজ পড়তে পারবে। প্রথমে নামাজের নিয়াত করতে হয়। নামাজের ধাপ বা অংশকে রাকাত বলা হয়। প্রতি রাকাতের শুরুতে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পাঠের পর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে তার পর সিজদা দিতে হয়। তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে “আত্তাহিয়াতু” দোয়া পড়তে হয়। নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর বসে “আত্তাহিয়াতু” দোয়ার সাথে “দরূদ শরীফ” পড়তে হয়। নামাজের শেষভাগে দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়। এর পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত বা প্রার্থনা করা হয়ে থাকে, যদিও তা নামাজের অংশ নয় এবং সহীহ হাদীসপন্থীদের মতে এটি বিদআত বা নবসৃষ্টি । নামাজের কিছু নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। তবে এসব বিতর্ক এড়িয়ে নামাযের সবচেয়ে বিশুদ্ধ পদ্ধতি হল বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয় সহ অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ হাদীস মোতাবেক নামাজ আদায় করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ، ‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ’… (বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘সালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬)”।
নামাযের ওয়াক্ত ও রাকাত
প্রতিদিন একজন মুসলমানকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হল “ফজর নামাজ” সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর ব্যপ্তিকাল। এরপর “যোহর ওয়াক্ত” বেলা দ্বিপ্রহর হতে “আছর ওয়াক্ত”-এর আগ পর্যন্ত যার ব্যপ্তি। তৃতীয় ওয়াক্ত “আছর ওয়াক্ত” যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে “মাগরীব” যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। “মাগরীব ওয়াক্ত” এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় “এশা ওয়াক্ত” এবং এর ব্যপ্তি প্রায় “ফজর ওয়াক্ত”-এর আগ পর্যন্ত।
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামায ছাড়াও এশা’র নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলমানরা আদায় করে থাকে।
কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল :
নাম | সময় | ফরযের পূর্বে | ফরয | ফরযের পর |
---|---|---|---|---|
ফযর (فجر) | ঊষা থেকে সূর্যোদয় | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা | ২ রাকাত | – |
যুহর (ظهر) | ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
আসর (عصر) | যোহরের শেষ ওয়াক্ত থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ পূর্ব পর্যন্ত অন্য মতে সূর্যস্তের পূর্ব পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | – |
মাগরিব (مغرب) | সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত | – | ৩ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
ইশা (عشاء) | গোধূলি থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত | ৪ রাকাত সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদা | ৪ রাকাত | ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা |
বিতর (وتر) | ইশার পর থেকে ফজরের পূর্র পর্যন্ত | ১ বা ৩ বা ৫ বা ৭ বা ৯ বা ১১ বা ১৩ |
১ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন এ নামাজগুলো পড়তেন।
২শুক্রবারে জুমা যুহর নামাজের পরিবর্তে পড়তে হয়
এশা নামাজ আদায় করার পর বেজোড় সংখ্যক রাকাত বিতর এর ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়।
বিশেষ নামাজ:
- তাহাজ্জুদের নামাজ। এশা’র পর এবং ফজরের আগে এই নামাজ পড়তে হয়।
- তারাবীহ্ এর নামাজ : শুধু মাত্র রমজান মাসে এই নামাজ পড়তে হয়। এশা’র নামাজের ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পরে এবং বিতর নামাজ এর আগে ২০ রাকাত তারাবীহ্ এর নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবীর ছালাত ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ৩ রাকাত বিতর সহ মোট ২৩ রাকাত আদায় করা সুন্নাত।দেখুন,(আন-নুকাত আলা কিতাবি ইবনে ছালাহ/আসকালানী ১/৪৯৪),মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, বাইহাকি ২/৩০৫,আল মুখতারাহ জিয়াউদ্দীন মাকদিসী ৩/৩৬৭,১১৬১,মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৩৯৩, ৭৭৬৪,মাজমাউল ফাতাওয়া ২৩/১১২-১১৩,সুনানে বাইহাকি ২/৪৯৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৩৯৩, কিয়ামুল লাইল, পৃ. ৯০,কিয়ামুল লাইল মারওয়াজি, পৃ. ৯০,মাজমু’আতুল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৩/১১২-১১৩,তিরমিজি : ৩/১৭০.
- জানাযার নামাজ : কোন মুসলমান মারা গেলে, মৃত দেহ কবর দেওয়ার আগে এই নামাজ পড়তে হয়। জানাযার নামাজ ফরযে কেফায়া।
- ঈদের নামাজ। প্রতি ঈদে দুই রাকাত করে নামাজ পড়া ওয়াজিব।
নামাজ | ||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
নামাজের প্রকারভেদ |
|
|||||||||||||||||||
নামাজের একক (রাকাত) এবং অন্যান্য অংশ |
|
|||||||||||||||||||
মসজিদ |
|
|||||||||||||||||||
শর্তসমূহ |
|
|||||||||||||||||||
Terms & Conditions
|
Disclaimer
|
Privacy Policy
|
About US
|
Contact Us
Copyright © 2019-2022 | Powered by
Mini Bladze
Copyright © 2019-2022 | Powered by Mini Bladze